প্রভুর প্রেম
ছেলেটি মেয়েটির কানের কাছে মুখ এনে বলল, কেমাতো সিবালভা।
মেয়েটি হেসে ফেলল। সে মুখটা অন্যদিকে ফিরিয়ে বলল, কেমাতো সিবালভা ওমিআ।
ইফতারির পর বাসে উঠেছি। এয়ারপোর্ট থেকে বায়তুল মোকাররম যাব। এসময় রাস্তাঘাট প্রায় ফাকাই থাকে। আশা করছি তাবারিহ ওখানেই পড়া যাবে।
আমার সামনের সিটে খুব অল্প বয়স্ক দুটো ছেলে মেয়ে এসে বসল। খুব সম্ভবত স্কুল পড়ুয়া হবে। এই বয়সের ছেলে মেয়েরা খুব বিপদজনক হয়। এরা সকালে ফেসবুকে চ্যাট করে, দুপুরে প্রেম, বিকেলে ব্রেক আপ এবং রাতেই সাধারণত আত্মহত্যা করে থাকে।
বাসে এসময় যাত্রী বলতে আমরা তিনজনই। এয়ারপোর্ট থেকে মহাখালী আসতে আসতে প্রেমালাপ প্রায় উচ্চ পর্যায়ে চলে গেল। কথা ওই একটাই, কেমাতো সিবালভা। সাংকেতিক শব্দ। স্পাই থ্রিলারেই ইউজ হয় হয়ত।
মহাখালী ফ্লাইওভারের উপর বাস এখন। ছেলেটি বলল, কেমাতো ড়াছা মিআ নাবচবা। রেম বযা।
মেয়েটি হেসে বলল, খাদে বেযা।
ওরা কথা বলছিল আর পেছনে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিল। সেকেলে হুজুর মানুষ এসব ত আসলেই না বুঝার কথা।
কিন্তু ইচ্ছা হল, ওদেরকে একটু শিক্ষা দেয়া দরকার। শব্দকে উল্টিয়ে কথা বলা এখন সেকেলে হয়ে গেছে। আমি বললাম, রামতো য়থাকো য়বাইযা?
ঝট করে ফিরে তাকালো দুজন পেছনে। মেয়েটি বলল, আংকল সব বুইযা ফালাইছে।
আমি কথাটা শুনেও না শোনার ভান করে একটা বই পড়তে লাগলাম। আমার হাতের বইটির নাম, তায়াল্লুক মায়াল্লাহ। হেকিম আখতার সাহেব রহ, এর এক অমর সৃষ্টি এ বইটি। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক তৈরির চমৎকার সিস্টেম বয়ান করা হয়েছে ওখানে।
ফ্লাইওভারের মাঝখানে এসে বাসের হেলপার ভাড়া চাইল। আমি দিলাম পচিশ টাকা। সামনের ছেলেটি দিল কত টাকা খেয়াল নেই।
ছেলেটি মানিব্যাগ বের করার সময় ওর ভেতর থেকে একটি ছবি পড়ে গেল নিচে। মেয়েটি তা কুড়িয়ে নিল।
ছবিটা কার জানার আগেই সেটা কেড়ে নিল ছেলেটি।
কিন্তু মেয়েটি তা দেখে ফেলেছে আগেই। সে বলল, ওটা প্রিয়াংকার ছবি। তুমি মিথ্যাবাদী। আমার সাথে মিথ্যে প্রেমের অভিনয় করেছ ইত্যাদি ইত্যাদি।
সে কাদতে কাদতে আলাদা সিটে গিয়ে বসল। এয়ারপোর্ট থেকে ফার্মগেট আসার আগেই প্রেম শেষ।
আমি মনে মনে বললাম, এখন কি বলবে কেমাতো নাসিবালভা? কিন্তু কিছুই বললনা। ছেলেটি বলল, হ্যা, প্রিয়াংকাকেই আমি ভালবাসি। তোমার দরকার নাই। নেমে গেলাম। সে ফার্মগেটে নেমে গেল।
পিচ্চি এই মেয়েটির সাথে কথা বলে জানলাম, ক্লাস নাইনে পড়ে দুজন। এর মধ্যেই প্রেম এবং ব্রেক আপ।
আমি বললাম, আমি তোমকে এমন একজনের সন্ধান দিতে পারি যার সাথে প্রেম করলে তিনি কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবেন না। তিনি মিথ্যে প্রেমের অভিনয়ও করবেননা।
মেয়েটি চোখের পানি মুছে বলল, বলুন তার পরিচয়। তিনি বয়স্ক হলেও অসুবিধে নেই। টাউট বাটপার দের সাথে আর কখনো যাবনা।
আমি তার হাতে হেকিম আখতার রহ, এর তাআল্লুক মাআল্লাহ বইটি দিয়ে বললাম, এইখানে তার ডিটেলস আছে। তুমি তার সাথেই প্রেম করতে পারো। একমাত্র তাকেই বলতে পারো নির্দ্বিধায়, কেমাতো সিবালভা। তোমাকে ভালবাসি।
মেয়েটি লজ্জা পেল। বলল, মনে করেছিলাম আপনি হুজুর মানুষ তাই অক্ষর উল্টিয়ে বললে বুঝতে পারবেননা। কিন্তু....
আমি বললাম, শুধু একবার মন থেকে আল্লাহকে বলো, কেমাতো সিবালভা।
সে বাসের জানালার বাইরে তাকিয়ে বলল, কেমাতো সিবালভা। তার চোখ থেকে মুক্তোর দানার মত ঝরতে লাগলো অশ্রুর দানা গুলো।
আমিও আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাম,মাবুদ কেমাতো সিবালভা।
kematos ibalva allah...!
ReplyDelete